কিভাবে পাবেন বর্ধিত বেতনের বকেয়া অংশ
Govt |
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডিসেম্বরের বেতনের সঙ্গে ২০১৫ সালের জুলাই-আগস্ট দুই মাসের আর ফেব্রুয়ারিতে জানুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর- এ তিন মাসের এরিয়ার হাতে পাবেন। অর্থাৎ নতুন বছরে দেশের ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নতুন কাঠামোর বকেয়া বেতন হাতে পাবেন। তবে সরকারি চাকুরেরা মহার্ঘ্য ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত যে অর্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেয়ে আসছিলেন, এরিয়ার দেয়ার সময় তা সমন্বয় করে নেয়া হবে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের তিন মাস পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত ১৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদিকে, নতুন এ বেতন কাঠামো অনুযায়ী পাঁচ বছর চাকরি করলেই পেনশন পাবেন সরকারি কর্মীরা। সপ্তম বেতন কাঠামোতে কমপক্ষে ১০ বছর না হলে কেউ পেনশন পেতেন না।
অষ্টম বেতন কাঠামোতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকুরেরা চাইলে অর্জিত ছুটি দিয়ে অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) সময় ছয় মাস বাড়াতে পারবেন। নতুন বেতন কাঠামোতে সরকারি চাকুরেদের পেনশনের হার ৮০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে; যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে। বর্তমানে পিআরএল ভোগরত কর্মচারীরাও পুনঃনির্ধারিত এ সুবিধা পাবেন।
অষ্টম বেতন কাঠামোর প্রকাশিত গেজেট অনুসারে ২০টি গ্রেডের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল বেতন ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৫০ টাকা। গ্রেড ভেদে বেতন বেড়েছে ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ। এছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও এদের সমমর্যাদার পদের বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিব ও সমমর্যাদার পদের বেতন ৮২ হাজার টাকা নির্ধারিত থাকছে।
বিদ্যমান সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বিলোপ করে গেজেটে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রতি বছরের ১ জুলাইয়ে একসঙ্গে সব সরকারি কর্মচারীর বেতন বাড়বে।
পেনশনের হার
নতুন বেতন স্কেলে একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাকরির প্রথম ৫ বছর পূর্ণ হলে পেনশন পাবেন ২১ শতাংশ হারে। ৬ বছর পূর্ণ হলে ২৪ শতাংশ, ৭ বছর হলে ২৭ শতাংশ, ৮ বছর হলে ৩০ শতাংশ, ৯ বছর হলে ৩৩ শতাংশ এবং ১০ বছর হলে ৩৬ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন।
এছাড়া চাকরির বয়স ১১ বছর পূর্ণ হলে ৩৯ শতাংশ, ১২ বছর হলে ৪৩ শতাংশ, ১৩ বছর হলে ৪৭ শতাংশ, ১৪ বছর হলে ৫১ শতাংশ, ১৫ বছর হলে ৫৪ শতাংশ, ১৬ বছর হলে ৫৭ শতাংশ, ১৭ বছর হলে ৬৩ শতাংশ, ১৮ বছর হলে ৬৫ শতাংশ, ১৯ বছর হলে ৬৯ শতাংশ এবং ২০ বছর পূর্ণ হলে ৭২ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবী।
আর একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর চাকরির বয়স ২১ বছর পূর্ণ হলে ৭৫ শতাংশ, ২২ বছর হলে ৭৯ শতাংশ, ২৩ বছর হলে ৮৩ শতাংশ, ২৪ বছর হলে ৮৭ শতাংশ এবং ২৫ বছর পূর্ণ হলে ৯০ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন তারা।
এক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে বা সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক স্থায়ীভাবে অক্ষম ঘোষিত হলে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবী পেনশন পাবেন। পাশাপাশি স্থায়ী পদ বিলুপ্তির কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই হলেও পেনশন পাবেন।
আনুতোষিক হার
বিধান অনুযায়ী একজন চাকরিজীবীকে অবসরকালীন মোট পেনশনের ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক সমর্পণ করতে হয়। বাকি ৫০ শতাংশ মাসিক নিট পেনশন হিসাবে গ্রহণ অথবা সমর্পণ করতে পারেন। নতুন বেতন স্কেলে পূর্ণ পেনশন সমর্পণ করলে প্রতি এক টাকার বিপরীতে ২৩০ টাকা আনুতোষিক হার বহাল রাখা হয়েছে। তবে পেনশন যোগ্য চাকরিকাল সর্বনিু ১০ বছর থেকে ৫ বছরে কমিয়ে আনার কারণে আনুতোষিক হার পূর্ণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ৫ থেকে ৯ বছর হলে আনুতোষিকের হার প্রতি এক টাকার বিপরীতে ২৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এটি পুরনো বেতন কাঠামোতে ছিল না। তবে চাকরিকাল ১০ বছরের বেশি এবং ১৫ বছরের কম হলে আনুতোষিক হার প্রতি এক টাকার বিপরীতে ২৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া চাকরির বয়স ১৫ বছরের বেশি কিন্তু ২০ বছরের কম হলে আনুতোষিক হার প্রতি এক টাকার বিপরীতে ২৪৫ টাকা এবং চাকরির বয়স ২০ বছরের বেশি হলে আনুতোষিক হার প্রতি এক টাকার বিপরীতে ২৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
পেনশন যোগ্যতার আগে মৃত্যুবরণ বা অক্ষম হলে
কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাকরির বয়স ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই স্বাস্থ্যগত কারণে অক্ষম বা মৃত্যু হলেও একটি বিধান রাখা হয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে। এতে বলা হয়েছে, চাকরির মেয়াদের প্রতি বছর বা তার অংশবিশেষের জন্য সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর সর্বশেষ প্রাপ্য বেতনের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ সহায়তা হিসেবে পাবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা তার পরিবার। পুরনো বেতন কাঠামোতে এককালীন ১৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়া হতো।
বিধবা স্ত্রীর আজীবন পেনশন
বর্তমান বিধান মতে মৃত চাকরিজীবীর বিধবা স্ত্রী আজীবন পারিবারিক পেনশন পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে পুনরায় বিয়ে না করার অঙ্গীকারনামা বা প্রত্যয়নপত্র দিতে হয়। নতুন বেতন কাঠামোতে মৃত চাকরিজীবীর স্ত্রীর বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে হলে সে ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামা বা প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজন হবে না।
মৃত নারীর বেসামরিক স্বামীর পারিবারিক পেনশন
পারিবারিক পেনশনের ক্ষেত্রে নারী চাকরিজীবী মারা গেলে, তার বেসামরিক চাকরিজীবী স্বামী আজীবন পারিবারিক পেনশন পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শর্ত থাকে স্বামী পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন না। তবে নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী, স্বামী সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত পারিবারিক পেনশন ভোগ করতে পারবেন।
অবসরভোগীদের পেনশন বৃদ্ধি
অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীর বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে বর্তমান পেনশন যা পাচ্ছেন সেখান থেকে আরও ৫০ শতাংশ বাড়বে। আর বয়স ৬৫ বছরের নিচে হলে বর্তমান প্রাপ্য পেনশনের ৪০ শতাংশ বাড়বে। তবে একজন অবসরভোগীর মাসিক পেনশন যাই হোক না কেন এখন থেকে তিনি সর্বনিু ৩ হাজার টাকা পেনশন পাবেন।
ছুটি নগদায়ন
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরকালীন অর্জিত ছুটি নগদায়নের বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরনো বেতন কাঠামোতে অর্জিত ছুটি পাওনা সাপেক্ষে ১২ মাসের ছুটি নগদায়ন করা যেত। নতুন কাঠামোতে ১৮ মাসের বেতন নগদায়নের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অবসর উত্তর ছুটি এবং ছুটি নগদায়নের ক্ষেত্রে দু'দিনের অর্ধগড় বেতনের ছুটিকে এক দিনের গড় বেতনের ছুটিতে রূপান্তর করা যাবে।