বিনা বেতনের চাকরি থেকে মুক্তি চান নন এমপিও শিক্ষকরা
নাগরিক সমাজের অনুরোধে আমরণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনে থাকা ননএমপিও শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বিনা বেতনে চাকরি করা থেকে মুক্তির দাবি করেন। একইসঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ফুটপাতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
ক্লাস-পাঠদান ছেড়ে দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান করছেন তারা। এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে টানা ১২ দিন ধরে 'দিন-রাত' কাটিয়েছেন শিক্ষকরা।
অবস্থানস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে কিছু শিক্ষক ঘুমাচ্ছেন আর কিছু বসে আছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের কয়েকজন জানালেন, বেতনহীন চাকরির দুর্দশার কথা। তাদের দাবি, শিক্ষকদের 'অভুক্ত' রাখার যে প্রথা চলছে, এতে 'মানসম্মত' শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ এশারত আলী বলেন, একদম বিনা বেতনে আমরা বছরের পর বছর চাকরি করছি। সবার প্রত্যাশা ছিল একদিন এমপিওভুক্ত হবে আমাদের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সরকার স্বীকৃতি দিলেও আমাদের এমপিওভুক্ত করছে না। বিনা বেতনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এখন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও বেতন আদায় করা যায় না। ফলে আমাদের জীবন কাটছে মানবেতরভাবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রী কেবল আশ্বাস দিচ্ছেন, তিনি বলছেন, টাকা নাকি পান না। তাহলে টাকা ছাড়া আমরা চলব কীভাবে? এভাবে চললে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। আর এতে ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হব। আর সরকার বলছে মানসম্মত শিক্ষার কথা, কিন্তু শিক্ষকদের অভুক্ত রেখে মানসম্মত শিক্ষা অসম্ভব।
২৬ অক্টোবর থেকে শহীদ মিনার ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। পরে চার দিন অনশন কর্মসূচিও পালন করেন তারা। বর্তমানে শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা ছাড়াও যোগদানের তারিখ থেকে বয়স গণনা করা এবং নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বা পাঠদান বন্ধ রাখার দাবিতে তাদের এ কর্মসূচি চলছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, দেশে সরকার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসার সংখ্যা প্রায় আট হাজার, যেখানে কর্মরত আছেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী।