দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও নিবন্ধন পাস করা শিক্ষকরা। আর যারা দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের মধ্যেও নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তারা এই পরীক্ষায় পাস করে সরাসরি স্কুল-কলেজের নিজস্ব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন, নাকি নতুন নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত হবেন এসব বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ২০০৬-এর অধিকতর সংশোধন করে সরকারি আদেশ জারি হয় গত ২২ অক্টোবর। নিয়ম অনুযায়ী ওই দিন থেকেই পুরনো নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হবার কথা। কিন্তু সারাদেশেই এখনও শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। অথচ নতুন নিয়মে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় গভর্নিং বডির শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা নেই। সরকারের দেয়া তালিকা থেকে নিয়োগ দিতে হবে।
আবার প্রজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ ২২ অক্টোবর লেখা থাকলেও বাস্তবে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে ৪ নভেম্বর। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের এই নতুন পদ্ধতির আদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে পরিপত্র জারি না হওয়ায় নিয়োগ বিষয়ক অনুসরণীয় পদ্ধতিসহ অনেক কিছু অস্পষ্ট রয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত সরকারি আদেশ জারির দিন থেকেই কার্যকর এবং ওইদিন থেকেই ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির শিক্ষক নিয়োগ ক্ষমতা রহিত হয়েছে। এরপরও যদি কেউ নিয়োগ দেন তবে তা অবৈধ হবে এবং এমপিওভুক্ত করা হবে না।
আর মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ বলেন, যেহেতু সরকারি আদেশ জারি হয়েছে। তাই আইনের একটি ভিত্তি তৈরি হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই একটি পরিপত্র জারি করা হবে। এই পরিপত্রে সব বিষয়ই স্পষ্ট করা হবে।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সংশোধিত এসআরও জারির পর শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকবে এমনটি শুনেছি। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান এখনও নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে। আবার তাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের প্রতিনিধিও পাঠাচ্ছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে এটি আমি এখনও জানি না। আমি কোন কপি পাইনি। তবে তিনি জানান, আদেশ জারির পর পুরনো নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায় না। বিভিন্ন নিয়োগ কমিটিতে এখনও শিক্ষা অধিদপ্তর তার প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখব।
শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিধি অনুযায়ী এসআরও জারির দিন থেকেই কার্যকর আর তাই শিক্ষক নিয়োগও আপাতত বন্ধ। তবে, যারা ২১ অক্টোবর পর্যন্ত নিয়োগ পেয়েছেন তারা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। আবার যাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ২২ অক্টোবরের আগে হয়েছে তারাও পুরোনো পদ্ধতিতে নিয়োগ নিতে পারবেন এবং তাদেরও এমপিওভুক্তিতে কোন সমস্যা হবে না।
নতুন নিয়মে যা আছে : নতুন নিয়মে এনটিআরসিএ প্রতি বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ওই জেলার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পদ ও বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করবে। এই তালিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রথমে একটি বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা হবে। এরপর ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধাক্রমের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক উভয় ক্ষেত্রে পৃথকভাবে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে তিনি মেধা তালিকায় স্থান পাবেন না। মেধা তালিকার বাইরে আরও ২০ ভাগ প্রার্থীকে অপেক্ষমাণ রাখা হয়। মৃত্যু হলে, চাকরি ছাড়লে বা অন্য কোনো কারণে পদ শূন্য হলে এই তালিকা থেকে শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাছাই পরীক্ষার ফল পরীক্ষা গ্রহণের ২০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। অনিবার্য কারণে এই সময় আরও ১০ দিন বাড়ানো যাবে। ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার ফল ৪৫ দিন ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের পর ৩০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। ফল প্রকাশের অনধিক ৯০ দিনের মধ্যে এনটিআরসিএ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তথ্যভান্ডারে নিবন্ধন করবে এবং তিন বছর মেয়াদি প্রত্যয়নপত্র দেয়া হবে।
গত ১৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘোষণা দেন, একমাসের মধ্যে কমিশন ও সংশোধিত বিধিমালা জারি হবে। এনটিআরসিএ’র অধীনে এ পর্যন্ত মোট পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৩২৯ জন সনদ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ হাজার ৪২ জন শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন
এ সংক্রান্ত সকল খবর
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ধোঁয়াশা
কমিশন গঠন ঘোষণায় বেসরকারি স্কুল কলেজে শিক্ষক নিয়োগের হিড়িক
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ হবে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায়
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঝুলে আছে শিক্ষক নিয়োগ
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের আবেদন