New Notice Has been published Pay Scale selection Finance mister
বেতন স্কেল নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
অনলাইন ডেস্ক :
শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদাসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে বেতনবৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত বিষয়াদি মন্ত্রিসভার সভার বৈঠকে আলোচনায় হয়েছে। প্রভাবশালী অনেক মন্ত্রী এ সমস্যার জন্য অর্থমন্ত্রণালয়কে দায়ী করেছেন। এদিকে অর্থমন্ত্রণালয় নিজেদের অবস্থান জানাতে ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল নিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন বিজ্ঞপ্তি :
সোমবার রাতে পাঠানো অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জালালউদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়েছে, নতুন বেতনকাঠামো আগেরটির সংশোধন নয়, বরং সম্পূর্ণ নতুন। এতে অনেক নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রয়োগ ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে কোনো অসংগতি থাকলে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারের সব পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বৈষম্য ও জটিলতা দেখা যাচ্ছিল। সব কর্মচারী এ সুবিধা সমভাবে পেতেন না, যার ফলে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ এবং অসংখ্য মামলা হচ্ছিল। টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তি মানে পদোন্নতি নয়, কেবল আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তি। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেতন ও চাকরি কমিশন এটি বিলুপ্তির সুপারিশ করে এবং তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়। কোনো চাকরিজীবী যাতে এ কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য ৫ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ক্রমপুঞ্জিত হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার আদেশ হয়েছে। একই সঙ্গে পদোন্নতি না পেলে ১০ ও ৬ বছর পর উচ্চতর গ্রেডের বিধান করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা যাতে টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড ছাড়া গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ প্রাপ্য হন সে জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাওয়া গেলে অর্থ বিভাগ দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় অনাপত্তি দেবে। সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্যাডারে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গ্রেডে আরও কিছু পদ সৃষ্টির কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে বলা হয়, বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাডার ও ক্যাডারবহির্ভূত পদে কর্মরত নবম গ্রেডে (সপ্তম কাঠামোতে প্রথম শ্রেণি) চাকরিজীবী রয়েছেন ৬৫ হাজার ৩০৮ জন। আর সব পর্যায়ে ক্যাডার ও ক্যাডারবহির্ভূত প্রায় ১২ লাখ চাকরিজীবী রয়েছেন। তা থেকে সরকারের সচিবসহ গ্রেড-১ ভুক্ত চাকরিজীবী রয়েছেন ১২২ জন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩২ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ হাজার ৪১১ শিক্ষকের মধ্যে গ্রেড-১ ভুক্ত অধ্যাপক রয়েছেন ৮২০ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয় অধ্যাপকেরা দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় গুণীজন। তাঁদের বেতন বা সম্মানী সিনিয়র সচিবদের বেতনের সমান করার বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এই সম্মানী কীভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে অর্থ বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে শুধু পত্র যোগাযোগ হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সরকারের একজন কর্মচারীকে সচিব পদে পদোন্নতি পেতে হলে প্রায় ২৭-৩০ বছর অপেক্ষা করতে হয়। পঞ্চম গ্রেডভুক্ত উপসচিব পদেই পদোন্নতির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১৬-২০ বছর। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ১২ বছরের মধ্যে তৃতীয় গ্রেডভুক্ত হয়ে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, অধ্যাপকেরা ২০-২৫ বছরের মধ্যে গ্রেড-১ পান। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমাও ৬৫ বছর। আর সরকারি চাকরিজীবীদের সে সময়সীমা ৫৯ বছর।
সবশেষে বলা হয়, সরকারি চাকরিজীবীকে ৯-৫টার পরও অফিস করতে হয়। সরকারের অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো কাজ করারও সুযোগ নেই। অন্যদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পান।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদাসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে বেতনবৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য এবং কয়েকজন সচিবের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকজন মন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি ও আন্দোলন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মন্তব্যের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে নেন।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার বলেছেন, শিক্ষকেরা না জেনেই আন্দোলন করছেন। পরে রাতে অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়েছে।এদিকে প্রজ্ঞাপন জারির আগে বেতনবৈষম্য নিরসনসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি শিক্ষকদের বিষয়ে কিছু সুপারিশ করলেও তা প্রজ্ঞাপনে প্রতিফলিত হয়নি। এমনকি ওই সভায় শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর একসঙ্গে এত বেতন বাড়েনি। তারপরও শিক্ষক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সমালোচনার কারণে সরকার এত বড় উদ্যোগের প্রশংসা পাচ্ছে না।